দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বৈষম্য চলছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। পদোন্নতি বঞ্চিত থাকায় অসন্তোষ জন্ম নিয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। বারবার দাবি জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পদোন্নতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছেন দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা।
এর আগে কর্মকর্তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয় কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আশ্বাসের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও দাবি না মানায় ফের আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যাংকটির দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা। আগামী শনিবার সকালে কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে পদোন্নতির দাবিতে মানববন্ধন করবেন পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
গত ২৭ আগস্ট ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে দাবির কথা জানিয়ে ৭ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে পদোন্নতি দেওয়া ও পদোন্নতিতে অন্যান্য গ্রেডের সাথে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ১ দফা দাবি নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী ৩ বছরে পদোন্নতি প্রদান, পদোন্নতিতে ভাইবা পদ্ধতি বাতিল করে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের (এসিআর) ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান, সুপারনিউমেরারি পদ্ধতিতে পদোন্নতি প্রদানসহ বেশ কিছু আশ্বাস দেয়। এমডির আশ্বাসে কর্মকর্তারা মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন এমডি মো. শওকত আলী অন্য ব্যাংকে যোগদান করে এবং কৃষি ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করলেও প্রমোশনের কোনো ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি। ফলে কর্মকর্তারা ব্যাপক ক্ষোভে ফুসে উঠছেন।
কৃষি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটিতে ৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তাদের ৩ বছর পরপর নিয়মিত পদোন্নতি হলেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সবাই বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখলেও কৃষি ব্যাংকের ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অথচ এই গ্রেডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই ব্যাংকটির সিংহভাগ কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকলেও তারা বছরের পর বছর উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। ৬ থেকে ৭ বছর বা তদুর্ধ সময় ধরে পদোন্নতি না পেয়ে একই গ্রেডে থাকায় কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে, এমনকি ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদোন্নতি বঞ্চিত এক কর্মকর্তা বলেন, কতৃপক্ষ আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করে চলেছেন। আমাদের ৩ বছর ভিত্তিক পদোন্নতির দাবি থাকলেও ৪ বছর ভিত্তিক পদোন্নতিযোগ্য ২ হাজার ৫৪৯ জনের একটি তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, কিন্তু সেটি পাশ করানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দেওয়া আশ্বাসকে তোয়াক্কা না করে বারবার শুধু পদোন্নতির নামে টালবাহানা করে যাচ্ছে। ভাইবার মাধ্যমে অনৈতিকভাবে পদোন্নতি বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য করার সুযোগ থাকায় ম্যানেজমেন্ট কোনোভাবেই ভাইবা পদ্ধতি বাতিল করতে চাচ্ছে না।
১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা নেওয়া কিছু কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার কথা বলে স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করে চলেছেন, যা তাদের দ্বিমুখী নীতির প্রতিফলন। ফলে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি তাদের কাছে বরাবরের মতই উপেক্ষিতই রয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তারা বুঝে গিয়েছে কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে পদোন্নতির নামে প্রহসন করে যাচ্ছে, যা তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক এবং উপ মহাব্যবস্থাপকদের সঙ্গে পদোন্নতির ব্যাপারে একাধিকবার আলোচনা হয়, কিন্তু তারা বারবার আশ্বাস দিয়ে সুকৌশলে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখেন। তাই তারা বাধ্য হয়ে পুনরায় আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছে। তারা প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি, অন্যান্য সকল গ্রেডের পদে ভাইবা কার্যক্রম বন্ধ, কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পদোন্নতির ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন করবেন বলেও জানান তারা।