দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) গত বুধবার যোগদানের পর গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল নতুন কমিশনের প্রথম কর্মদিবস। এদিন সকালে কর্মস্থলে গিয়েই সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কক্ষ ঘুরে দেখেন ও তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন নবনিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার পরে কমিশন সভা করে অনুমোদন দেন সাবেক দুই মন্ত্রী, একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ৬ মামলার। এ ছাড়া সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এক ডজনের বেশি প্রভাবশালীর ওপর। সম্পদ বিবরণী জারির নোটিশ দেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গতকাল দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তার ছেলে রাহাত মালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও তার স্ত্রী আলেয়া দেওয়ান, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিনের বিরুদ্ধে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে শতাধিক অ্যাকাউন্টে শত শত কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা যাদের বিরুদ্ধে: দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলাকালে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় এক ডজনের বেশি প্রভাবশালীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ভোলা-৩ আসনের সাবেক এমপি নূর নবী চৌধুরী শাওন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আবু জাহির, নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। একই সঙ্গে এসব ব্যক্তির স্ত্রী, ছেলেমেয়েদেরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও তার স্ত্রী সিলভিয়া পারভিন, ছেলে সাদমান শাহরিয়ার ও আহনাফ শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন বাহার, তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি মেয়র তাসনিম বাহার সূচনা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু ও তার পালিত কন্যা সুমাইয়া, পি এ ফররুখ মজিদ মাহমুদ কিরণ ও তার স্ত্রী রাফেজা মজিদ, হোটেল রিজেন্সির এমডি কবির রেজা ও তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুন।
কয়েকজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষের দিকে চলে আসায় তাদের নিষেধাজ্ঞার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা হলেন সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহি, বগুড়া-২ আসনের সাবেক এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও তার স্ত্রী মহমিনা আক্তার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলীসহ দুদকের মামলার ২৪ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার সময় বৃদ্ধির করা হয়েছে।
যাদের সম্পদ ক্রোকের সিদ্ধান্ত হয়েছে: ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালকদের সম্পদ ক্রোক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেন ও তার স্ত্রী, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক এমপি সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়ার সব সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদকের নতুন কমিশন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মির্জা আজমের নামে-বেনামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ও মেয়ে আফিয়া আজম অপির নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রাখার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক। মির্জা আজম ও তার কোম্পানি, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৬০টি হিসাবে ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার টাকা জমা ও ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার সন্দেহজনক উত্তোলনের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। মির্জা আজমের স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনসহ তার নিজের এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২০টি অ্যাকাউন্টে ১৮১ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা জমা ও ১৭৯ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকার সন্দেজনক উত্তোলনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার ও কমিশনার স্যার প্রথম দিনেই কমিশন সভা করে ৬ মামলার অনুমোদন, অনুসন্ধান চলছে এমন কয়েকজন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, কয়েকজনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।